Nobel Prize Acceptance Speech of Rabindranath Tagore in Bengali


Nobel Prize Acceptance Speech of Rabindranath Tagore in Bengali

Rabindranath Tagore Nobel Prize Acceptance Speech in bengali

রচনা পরিচিতি: রবীন্দ্রনাথ তাঁর নােবেল প্রাইজ গ্রহণের সময় যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন তা থেকে কিছু অংশ এখানে তুলে দেওয়া হয়েছে ।

আজ আমি আনন্দিত কারণ অবশেষে আমি আপনাদের দেশে আসার সুযােগ পেয়েছি । আর আপনারা যে আমার কাজকে স্বীকৃতি দিয়ে আমাকে সম্মানিত করেছেন , আমাকে নােবেল প্রাইজে পুরস্কৃত করেছেন সেজন্য আমি আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই । যেদিন বিকেলে আমি কেবলগ্রামের মাধ্যমে খবরটা পেলাম সেদিন আমি ছিলাম শান্তিনিকেতনে । তারবার্তাটি প্রথমে আমি বিশ্বাস করতে পারিনি । তারপর বার্তাটি যখন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ল শান্তিনিকেতনের ছাত্র - শিক্ষকদের আনন্দের সীমা রইল না । তারা আমার জন্য গর্ববােধ করল । আমার মনে হল আপনারা আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন আমার দেশবাসীরা তার অংশীদার হবে ।

        এইভাবে সারা বিকেল কাটল । রাতের বেলা যখন আমি একাকী হলাম তখন আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম কেন পাশ্চাত্যের লােকেরা আমার কবিতা পছন্দ করেছে এবং সম্মান দিয়েছে । আমার মনে পড়ছে যখন আমি তরুণ ছিলাম তখন কীভাবে আমার লেখার কাজ এগিয়ে চলেছিল । যখন আমার বয়স পঁচিশ বছর তখন আমি গঙ্গার ধারে একটি প্রত্যন্ত পল্লিতে একাকী থাকতাম । হিমালয় থেকে আসা বুনাে হাঁসের ঝাঁক ছিল আমার একমাত্র সঙ্গী । বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়া সূর্যালােককে আমি যেন প্রাণভরে পান করে নিতাম । নদীর কুলুকুলুধ্বনি যেন আমাকে প্রকৃতির গােপন কথা শােনাত । এই সুদূর বিস্তৃত নির্জনতার মধ্যেই আমার কবিতার সৃষ্টি । এইভাবে নির্জনতার মধ্যেই আমার জীবন কাটতে লাগল । আমার এই অজ্ঞাত পরিবেশে আমি পরিতৃপ্ত ছিলাম । এরপর একটা সময় এল যখন আমি নির্জনতা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইলাম । আমার দেশবাসীর জন্য নির্দিষ্ট কিছু কাজ করার একটা তাগিদ অন্তর থেকে অনুভব করলাম । প্রথমেই যে কাজটি করার কথা আমার মনে হল তা হল শিশুদের শিক্ষাদান । প্রকৃতির সঙ্গে শিশুদের প্রতিও আমার স্বাভাবিকভাবে গভীর ভালােবাসা ছিল । আমি চাইলাম তাদের শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তির আনন্দ দিতে হবে । শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠান শুরু করার উদ্দেশ্য ছিল শিশুদের যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের জ্ঞানপিপাসাকে বাড়ানাে । কিছু ছেলে নিয়ে আমি তাদের শিক্ষা দিতে এবং শিক্ষামুখী করতে চেষ্টা করলাম ।

          আমি তাদের খেলার সঙ্গী হয়ে উঠলাম । ছেলেদের উৎসাহ ও আনন্দ সমস্ত পরিবেশকে ভরিয়ে তুলত আর আমি প্রতিদিন সেই আনন্দ পান করতাম । সূর্যাস্তের সময় আমি একাকী বসে থেকে গাছের ছায়াঢাকা রাস্তাগুলাে লক্ষ করতাম । আমি শুনতে পেতাম ছােটো ছােটো ছেলেদের কোলাহল । এটা ছিল আমার কাছে জীবনের শব্দ , জীবনের আকাঙ্ক্ষা , জীবনের আনন্দ । এইরকম পরিবেশে আমার গীতাঞ্জলির কবিতাগুলি লিখতাম আর মাঝরাতে নক্ষত্রখচিত আকাশের তলায় আমি সেগুলি নিজেকেই শােনাতাম । তারপর একদিন এল যখন আমি এই বিরাট পৃথিবীর হৃদয়ের সঙ্গে মিলিত হওয়ার তাগিদ অনুভব করলাম ।